নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: মাদক যে সর্বনাশা, সেই কথা আবার প্রমাণ করলেন এক পিতা। কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাদকের টাকা যোগাড় করতে দেড় বছর বয়সী নিজের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেন ওই পিতা। বিক্রির আট দিন পর মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুরের বারিয়া পাড়ার এক ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর শিশু জান্নাতুল মেহেরাজকে মা রাবেয়া বেগমের কোলে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাবা রেজাউল করিমকে (৩২)। গতকাল শুক্রবার তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সন্তান বিক্রির ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রেজাউল চকরিয়া পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাটাখালী ফুলতলা গ্রামের মৃত রশিদ আহমদের ছেলে। তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের বাড়ি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাজার পাড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, মাদকাসক্ত স্বামী রেজাউল করিম যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে (২৫)। এমনকি বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে ভরণ–পোষণ দেন না। দু মুঠো ভাতের জন্য স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এভাবে প্রায় দুই বছর কেটে যায়। এরপরও মাদক সেবনের টাকার জন্য বাড়িতে এসে স্ত্রীকে নির্যাতন করেন রেজাউল। সর্বশেষ মাদকের টাকা যোগাড় করতে স্ত্রীর অজান্তে নিজের দেড় বছরের মেয়ে জান্নাতুল মেহেরাজকে সামান্য টাকায় বিক্রি করে দেন।
সন্তানকে না পেয়ে অনেকটা পাগলের মতো হয়ে যান মা রাবেয়া বেগম। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তিনি খবর পান তাঁর সন্তানকে মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়ার এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাবা রেজাউল বারিয়া পাড়ার ওই ব্যক্তিকে জানিয়েছিলেন, চলার পথে তিনি শিশুটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। তার কথা বিশ্বাস করে শিশুটিকে হেফাজতে নেন ওই ব্যক্তি। রেজাউলকে হাজার খানেক টাকাও দেন।
রাবেয়া বেগম গতকাল দুপুরে পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে স্বামীর এই নিষ্ঠুরতার চিত্র তুলে ধরেন। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আট দিন আগে আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গেলে জান্নাতুলকে চুরি করে নিয়ে যায় মাদকাসক্ত স্বামী রেজাউল। সাত দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাচ্ছিলাম না দেড় বছর বয়সী বুকের ধনকে। বৃহস্পতিবার বিকালে খবর পাই, শিশুটিকে মহেশখালীর শাপলাপুরের বারিয়া পাড়ায় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওই টাকায় ইয়াবা কিনে সেবন করছে স্বামী। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে গিয়ে বিস্তারিত জানাই। এরপর পুলিশ স্বামীকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। পুলিশের সহায়তায় আমার মেয়েকে আজ (গতকাল) সকালে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বশিরুল আইয়ুব চকরিয়া নিউজকে জানান, নিজের সন্তানকে কোনো বাবা এভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক পুলিশের সহায়তা নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার এবং মাদকাসক্ত রেজাউলকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহায়তা করি।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গাজী মঈন উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রথমে রেজাউলকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পাওয়া যায় ৩৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে,সামান্য টাকায় তার মেয়েকে মহেশখালীর শাপলাপুরে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে। এই তথ্য পাওয়ার পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, মাদকাসক্ত রেজাউল নিজের সন্তান চুরি করে বিক্রির ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: